আজ বৃহস্পতিবার, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কেউ মানছে না তার কথা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :
বারবারই বিফল হচ্ছে সাংসদ সেলিম ওসমানের হঙ্কার বা হুঁশিয়ারী। যাদেরকে কেন্দ্র করে তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করছেন, তারা কেউই সেসব গায়ে মাখছেন না। খান মাসুদ থেকে শুরু করে আজকের হকার এবং রাজাকারপুত্র মাকসুদ কিংবা মুকুলÑ কেউ পাত্তা দিচ্ছেন না এই সাংসদের হুঁশিয়ারী কিংবা অনুরোধ।
অনেকেই বলছেন, যাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন তারা হয়তো বা সাংসদ সেলিম ওসমানকে অনেক নখ দন্তহীন কাগুজে বাঘ মনে করেন। তাই হয়তো তার হুঁশিয়ারী বা অনুরোধকে সেভাবে পাত্তা দেন না।
তবে, সচেন মহল বলছেন, সাংসদ সেলিম ওসমান রাজনীতি করলেও তার একটা ভালো গুণ রয়েছে। কমবেশি সব রাজনীতিকেরই সন্ত্রাসী বাহিনী থাকে। যার কারণে তাদেরকে ভয় পায় অন্যরা। কিন্তু সেলিম ওসমানের তেমন কোনো বাহিনী নেই। তিনি কোনো সন্ত্রাসীকে লালন পালনও করেন না। মূলত এ কারণে তার হুঙ্কারকে আমলে নেন না অন্যরা। যদি তার সন্ত্রাসী বাহিনী থাকতো তাহলে তিনি এ পর্যন্ত যাদেরকে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন তারা ভয় পেতেন এবং তা আমলে নিতেন।
সূত্র মতে, সাংসদ সেলিম ওসমান ইতোপূর্বে বন্দরের খান মাসুদকে উদ্দেশ্য করে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছিলেন। হুঙ্কার ছেড়ে তিনি তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সেসব গায়ে মাখেননি। নিজের মতো করেই নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তিনি সাংসদ শামীম ওসমান অনুসারি হিসেবে পরিচিত।
সাম্প্রতিক সময়ে সাংসদ সেলিম ওসমান বন্দর উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজাকারপুত্র মাকসুদ হোসেনকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুঙ্কার ছেড়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভালোই ভালো যদি কথা না শুনেন তাহলে কীভাবে মুগুর মারতে হয় তা আমি ভালোই জানি। কিন্তু তার সেই হঙ্কারকে মোটেও পাত্তা দেয়নি মাকসুদ। বরং তিনি পূর্বের থেকে আরও বেশি সক্রিয় হয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। তার এই আচরণকে একজন সংসদ সদস্যকে বৃদ্ধাঙুলি দেখানো বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, বিগত পনের বছর ধরে ওসমান পরিবারের ছত্রচ্ছায়াতেই ছিলেন মাকসুদ। এই ছায়াতলে থেকে তিনি ও তার পরিবার ফুলেফেঁপে মোটাতাজা হয়েছেন। এখন সেই পরিবারের সন্তানকেই পাত্তা দিচ্ছেন না। রীতি মতো স্পর্ধা দেখিয়েছেন মাকসুদ।
অন্যদিকে একই ইস্যুতে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া আতাউর রহমান মুকুলকেও তিনি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য উদ্ধাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু শেষতক এই মুকুলও সেই আহ্বানে সাড়া দেননি। তিনি নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। নিজের মতো করে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন থেকে আতাউর রহমান মুকুল একচুলও নড়বেন না। তিনি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। অথচ এই মুকুলও বিগত পনের বছর ধরে ওসমান পরিবারের ছত্রচ্ছায়ার কারণে বিএনপির রাজনীতি করেও একদিনের জন্যও জেলে যাননি। এমনকী যখন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী একের পর এক মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন সে মুহূর্তে এলাকাতেই বীরদর্পে ছিলে আতাউর রহমান মুকুল। সেটি সম্ভব হয়েছিল একমাত্র সেলিম ওসমানের সঙ্গে তার সখ্যতা থাকার কারণে। অথচ সেই আতাউর রহমান মুকুলও সাংসদ সেলিম ওসমানের অনুরোধকে পাত্তা না দিয়ে একরক বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
এর আগে হকার ইস্যু নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেন সাংসদ সেলিম ওসমান। তার প্রতিটি সিদ্ধান্তই ছিল সুন্দর ও সু-শৃঙ্খল। একদিকে তিনি যেমন নগরবাসীর কথা ভেবেছেন তেমনি হকাররা যাতে এই রমজানে কষ্টের সম্মুখিন না হয়, সেদিক বিবেচনায় রেখেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন এই সাংসদ। কিন্তু তার সেই নির্দেশনা কিংবা অনুরোধ হকারেরাও মানেনি। অর্থাৎ এসব হকারেরাও তাকে পাত্তা দেয়নি। তার নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে একনও তারা বঙ্গবন্ধু সড়কে পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
সচেতন মহল বলছে, সাংসদ সেলিম ওসমান একজন মুক্তিযোদ্ধা। রণাঙ্গণে তিনি যুদ্ধ করেছেন। এই দেশেরে একজন বীর সেনানি তিনি। এছাড়াও তিনি একজন ব্যবসায়ী নেতা। অসংখ্য ব্যবসায়ীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। আবার শ্রমিক সঙ্কটেও এগিয়ে আসছেন। এছাড়াও তিনি একজন আইন প্রণেতা। একজন সংসদ সদস্য। অথচ তার মতো এমন একজন ব্যক্তির নির্দেশনা কিংবা হুঁশিয়ারী যারা আমলে না নেয় তারা নিশ্চিত অন্য কোনো খুঁটির জোরেই লাফায়। কেননা, ছাগল নাচে খুঁটির জোরে। এসব ব্যক্তিরাও সেই খুঁটির জোরেই লাফাচ্ছে। এখন দেখার বিষয় সেই খুঁটির ভূমিকায় কে রয়েছেন, কার জোরে তারা এভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অবাজ্ঞা করছেন।